চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ. এম. এম. নাসির উদ্দিন বলেছেন, ‘রাতের অন্ধকারে ভোট চাই না। আমাদের লক্ষ্য শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন করা।’ সাংবাদিকদের সহযোগিতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সিইসি বলেন, ভোটকেন্দ্রের ভেতরে সাংবাদিকদের প্রবেশে কোনো বাধা থাকবে না। কেন্দ্রে ভিড় না থাকলে তারা ১০ মিনিট অবস্থান করতে পারবেন, প্রয়োজনে সময় আরও বাড়ানো হবে।
রোববার (১২ অক্টোবর) চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি নির্বাচনের পরিবেশ ও সাংবাদিকদের নিরাপত্তা বিষয়ে স্পষ্ট বার্তা দেন।
গণতন্ত্রায়ণের পথে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) বাধা সৃষ্টি করবে না বলে মন্তব্য করেছেন তিনি বলেন, কোনো দল নিবন্ধন যখন পায়, আমাদের যে নির্ধারিত প্রতীকের তালিকা- সেখান থেকে প্রতীক নিতে হয়। যেহেতু শাপলা আমাদের তালিকায় নেই, তাই দিতে পারিনি।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত তালিকার বাইরে কাউকে প্রতীক দেওয়া হয়নি। নতুন করে প্রতীক যোগ করতে অসুবিধা আছে কি-না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে কোনো অসুবিধা নেই বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের উদ্দেশ্য স্পষ্ট সাংবাদিকদের সহযোগিতা চাই। তারা যেন স্বাধীনভাবে নির্বাচন কাভার করতে পারেন, আমরা সর্বাত্মক সহায়তা করব। সঠিক তথ্য প্রকাশে আমরা উৎসাহিত করব, তবে মিথ্যা প্রচার বা বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো প্রতিহত করতে হবে।
বর্তমানে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা একটি সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এআই সমস্যাটা শুধু আমাদের দেশের সমস্যা নয়। এটি বিশ্বের একটি সমস্যা। এআই এর ৫০ শতাংশ সোর্স শনাক্ত করা যায় না। আলোচনায় কেউ কেউ বলেছে ইন্টারনেট বন্ধ করতে। আমরা ইন্টারনেট বন্ধের পক্ষে নই। আমি চাই, তথ্য প্রভাব বজায় থাকুক। আমরা চাই একটি স্বচ্ছ নির্বাচন উপহার দিতে। লুকানো কোনো নির্বাচন দিতে চাই না। রাতের অন্ধকারের ভোট চাই না। আমরা চাই পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন- সবার দৃষ্টিগোচর হয় এমন নির্বাচন।
ফ্যাক্ট চেকিংয়ের গুরুত্ব তুলে ধরে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, ‘ভুল তথ্য সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে। তাই সংবাদ প্রচারের আগে যাচাই অত্যন্ত জরুরি। কিছু গণমাধ্যম ও ইউটিউব চ্যানেল ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে, যা প্রশংসনীয়।
তিনি আরও বলেন, ‘নারী-পুরুষ ভোটাররা যেন নিজের পছন্দমতো ভোট দিতে পারেন, তা নিশ্চিত করা হবে। নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা ও প্রিসাইডিং অফিসাররা দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন এবং সাংবাদিকদের সহযোগিতা করবেন।
যারা এনসিপিতে নেতৃত্বে আছেন তারা ২০২৪ এর আন্দোলনে সম্মুখসারিতে থেকে আন্দোলন করেছেন। তারা গণতন্ত্রায়ণের পথে বাধা সৃষ্টি করবেন না- সেটা আমি বিশ্বাস করি। আমি তাদের কোনো অংশে কম দেশপ্রেমিক ভাবতে চাই না। তারাও দেশের ভালো চান, তারাও দেশের গণতন্ত্র চান, আমার বিশ্বাস গণতন্ত্রের উত্তরণটা যাতে সুন্দর হয় সে বিষয়ে তারা সম্মতি দিবেন। তারা আমাদের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানে।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। আর রোহিঙ্গা ভোটার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন হবে নতুন ভোটার তালিকার ভিত্তিতে, যা জনগণের স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু ভোটাধিকার নিশ্চিত করবে।’
সিইসি বলেন, যারা নেতৃত্বে রয়েছেন, তারা দেশের জন্য সুন্দর একটি নির্বাচন নিশ্চিত করতে নিজেদের জীবন ঝুঁকিতে রেখেছেন। তাই সবার উচিত দায়িত্বশীলভাবে তথ্য যাচাই ও প্রচার করা। সুষ্ঠু নির্বাচনে সাংবাদিকরা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী।
এসময় উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ড. মোহাম্মদ জিয়াউদ্দীন, সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আহসান হাবীব পলাশ, চট্টগ্রামের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বশির আহমদ প্রমুখ।
সকালবেলা/এমএইচ