নতুন প্রজন্মের কাগজ -
Social Media Section
ঈসা হোসাইন
প্রকাশ : Oct 10, 2025 ইং
অনলাইন সংস্করণ

বিলুপ্তপ্রায় ঐতিহ্য: কুয়া ও ইন্দিরার গল্প

এক সময় গাইবান্ধার সাতটি উপজেলার গ্রাম, পাড়া, মহল্লার জীবনে কুয়া ও ইন্দিরা ছিল অবিচ্ছেদ্য অংশ। এখন সেগুলো কালের গর্ভে হারিয়ে গেছে। বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে এক টুকরো গ্রামীণ ঐতিহ্য।

গ্রামীণ জীবনের প্রাণ ছিল কুয়া

৯০-এর দশকে গাইবান্ধা সদর, সুন্দরগঞ্জ, গোবিন্দগঞ্জ, সাদুল্লাপুর, পলাশবাড়ী, ফুলছড়ি ও সাঘাটা উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রতিটি পরিবারের প্রয়োজনীয় পানি আসত এই কুয়া থেকেই। সকালে সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে হাঁড়ি, কলস, বালতি হাতে গ্রাম্য নারীরা ভিড় করতেন কুয়ার ধারে। ঠান্ডা পানিতে ধোয়া-মোছা, রান্না, গোসল—সব কিছুই চলত এই কুয়া থেকেই।

ইন্দিরার ঐতিহ্য

তখন টিউবওয়েল ছিল দুর্লভ। সামর্থ্যবান পরিবারগুলো ইট, পাথর ও সিমেন্ট দিয়ে বানাত ইন্দিরা, আর মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার মাটি ও বাঁশের পাট দিয়ে তৈরি করত কুয়া। গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বামনডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী ইন্দিরাটি আজও কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
একসময় এখান থেকেই শত শত মানুষ তাদের দৈনন্দিন পানির চাহিদা মেটাত। সুন্দরগঞ্জের লালচামার সরকারপাড়া বা সারকুলার রোডের দৈনিক ঘাঘট অফিস সংলগ্ন ইন্দিরার নাম আজও স্থানীয়দের মুখে মুখে ফেরে।

সামাজিক মিলনমেলা

কুয়া ছিল শুধু পানির উৎস নয়, ছিল সামাজিক মিলনক্ষেত্রও। সকালে সেখানে জমত গ্রামের গল্পগুজব, হাসি-মজার আড্ডা। কারো কুয়া নষ্ট হলে বা বালতি পড়ে গেলে সবাই মিলে সেটি তুলতে যেত—একটা পারস্পরিক সহযোগিতা ছিল এই কুয়ার চারপাশে।

অতীত হয়ে যাওয়া জলজীবন

আজকের আধুনিক যুগে টিউবওয়েল, গভীর নলকূপ ও মোটরের জগতে সেই কুয়ার আর প্রয়োজন নেই। নতুন প্রজন্মের কাছে ‘কুয়া’ শব্দটাই এখন অপরিচিত। তারা এটিকে কেবল গল্পের বিষয় বলে মনে করে।

গাইবান্ধার প্রবীণরা আজও স্মৃতিচারণ করে বলেন,
“এই কুয়ার পানি দিয়েই তো আমরা বাঁচতাম। তখনকার পানির স্বাদই ছিল আলাদা।”

ঐতিহ্য রক্ষার আহ্বান

এখন কুয়া ও ইন্দিরা কেবল ছবিতে বা গল্পে টিকে আছে। অথচ এগুলো ছিল গ্রামের সংস্কৃতি, ঐক্য ও সৌন্দর্যের প্রতীক। স্থানীয়রা মনে করেন, কুয়া ও ইন্দিরাকে শুধু পানির উৎস নয়, ঐতিহ্য হিসেবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এই ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা জরুরি।

সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাওয়া সেই ইন্দিরা ও কুয়া একসময় ছিল গ্রামীণ জীবনের প্রাণ। আজ প্রবীণদের মুখে শোনা যায় কেবল দীর্ঘশ্বাস—
“যে কুয়ার পানিতে একসময় জীবন চলত, আজ তা ইতিহাসের পাতায় হারিয়ে গেছে।”

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

মেহেরবানি করে চাঁদাবাজি করবেন না, রাজশাহীতে কর্মী সম্মেলনে জ

1

অগ্নিকাণ্ডের ৫ দিন পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশ

2

সাংবাদিকদের দ্রুত অ্যাক্রিডিটেশন প্রদানের আহ্বান অনলাইন এডিট

3

প্রবীর মিত্রের শেষ দিনগুলো যেমন ছিল

4

৪৮ রানে ৭ উইকেট হারাল পাকিস্তান, ওয়ারিকানের স্পিন–ঘূর্ণি

5

পুতিন-কিমের সঙ্গে চুক্তি চান ট্রাম্প

6

৪৩তম বিসিএসের ২২৭ জনের প্রজ্ঞাপন হয়নি এখনো, রোববারের মধ্যে প

7

‘আমি ভয়ও পাচ্ছি, কারণ ইসরায়েলিদের বিশ্বাস করি না’

8

অবিবেচনাপ্রসূতভাবে ভ্যাটের হার বাড়ানো হয়েছে: দেবপ্রিয়

9

দক্ষতা উন্নয়নে নজর কম, ফ্রিল্যান্সার তৈরির হিড়িক

10

ভারতের সঙ্গে কথা হবে চোখে চোখ রেখে

11

অগ্নিকাণ্ডের ৫ দিন পর সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রবেশ

12

ট্রাম্প ওয়াশিংটনে পৌঁছেছেন, প্রথম দিনেই সই করবেন রেকর্ডসংখ্য

13

পুমদী ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক সভা অনু

14

বর্তমান সরকারের প্রধান দায়িত্ব শেখ হাসিনাকে ফিরিয়ে এনে বিচার

15

মুক্তমত প্রকাশ–সংক্রান্ত ও গায়েবি মামলা ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্

16

সেমিকন্ডাক্টর খাতের বিকাশে টাস্কফোর্স গঠন, সদস্য ১৩ জন

17

রান নেই–উইকেট নেই, তবু ম্যাচসেরা

18

অতীতের রাষ্ট্রপরিচালকেরা দুর্নীতি করে আঙুল ফুলে বটগাছ হয়েছেন

19

নতুন বছরের শুরুতেই যেসব ফোনে বন্ধ হচ্ছে হোয়াটসঅ্যাপ

20