বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের আমির ডা. শফিকুর রহমান সেনাবাহিনীর উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন, যার লক্ষ্য গুম ও খুনের সঙ্গে জড়িত কতিপয় সেনা কর্মকর্তাকে বিচারের আওতায় আনা। এই উদ্যোগকে তিনি দেশের গণতান্ত্রিক ও মানবাধিকার সংরক্ষণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
রোববার (১২ অক্টোবর) ভোরে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এ বিষয়ে একটি স্ট্যাটাস দেন।
ডা. শফিকুর রহমান লিখেছেন, দেশের জনগণ গর্বিত থাকার মতো দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে নিয়েও, দুঃখজনক হলেও সত্য, এই বাহিনীর কতিপয় সদস্য পূর্বে দেশের বিদ্যমান আইন এবং মানবাধিকারের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শনে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি আরও বলেছেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের প্ররোচনায় প্রতিপক্ষ নিধনের এজেন্ডা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অন্ধ সহযোগী হিসেবে কাজ করেছিলেন। ফলশ্রুতিতে দেশে গুম এবং খুনের একটি ভীতিকর পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল, যা জাতির জন্য অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয়। তবে জামায়াত আমির স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, সুনির্দিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তার অপরাধের কারণে পুরো সেনাবাহিনীকে দায়ী করা যাবে না। অপরাধের দায় কেবল সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ওপর বর্তাবে। এই বক্তব্যে তিনি সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্বের ভারসাম্য বজায় রাখার গুরুত্ব তুলে ধরেছেন।
ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেছেন, সেনাবাহিনী যদি স্বচ্ছভাবে বিচার প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে এবং অভিযুক্তদের হেফাজতে রাখে, তবে এটি দেশের জনগণের বিশ্বাস এবং ন্যায়বিচারের প্রতি আস্থা পুনঃস্থাপন করবে। তিনি বলেন, ‘আমরা সেনাবাহিনীর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।’ এই মন্তব্যে দেখা যাচ্ছে, জাতির নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচারের ওপর তার দৃঢ় আস্থা রয়েছে। তিনি আরও যোগ করেছেন, স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত বিচার প্রক্রিয়ার ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। কোনো ব্যক্তির ওপর অবৈধ বা পক্ষপাতমূলক চাপ প্রয়োগ করা হলে, তা দেশের আইনশৃঙ্খলা ও মানবাধিকারের ক্ষতি করবে। তাই তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, নির্দিষ্ট অপরাধীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করতে বিচার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হবে।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, এই পদক্ষেপ শুধু অতীতের অপরাধের দায় মুছে দেবে না, বরং ভবিষ্যতে কেউ নিজের পেশা বা পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে জনগণের জানমাল ক্ষতি করার আগ্রহ প্রকাশ করলে তা আটকানো সম্ভব হবে। এতে দীর্ঘমেয়াদে দেশের জনগণ উপকৃত হবে এবং আইন ও শৃঙ্খলার প্রতি সম্মান বৃদ্ধি পাবে। জামায়াত আমির আরও উল্লেখ করেছেন, দেশের সেনাবাহিনী একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান। সুতরাং, কিছু কর্মকর্তার অপরাধের জন্য পুরো বাহিনীকে দায়ী করা উচিত নয়।
তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের প্রাসঙ্গিক বিচার প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত হওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি দেশের মানুষের মধ্যে বিশ্বাস পুনঃস্থাপনে সহায়ক হবে। এই প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেছেন, ‘সেনাবাহিনীর এ উদ্যোগ দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে মজবুত করবে এবং একই সঙ্গে আইন ও ন্যায়বিচারের মান নিশ্চিত করবে। আমাদের আশা, যারা অতীতে আইন ও মানবাধিকারের প্রতি অবজ্ঞা প্রদর্শন করেছে, তারা এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি হবে।’
ডা. শফিকুর রহমানের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয় যে, তিনি আশা রাখেন যে, বিচার প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা হবে এবং কোনো রাজনৈতিক বা পারস্পরিক প্রভাবের কারণে বিচারের ফলাফল বিকৃত হবে না। এছাড়া, এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভবিষ্যতে জাতি ও সমাজকে আরও দায়িত্বশীল এবং সচেতন নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব।
পরিশেষে, জামায়াত আমির মনে করিয়ে দিয়েছেন, দেশের আইন, শৃঙ্খলা এবং মানবাধিকারের প্রতি সম্মান রক্ষা করা সবার দায়িত্ব। সেনাবাহিনীর এই উদ্যোগ শুধুমাত্র নির্দিষ্ট অপরাধীদের দায়িত্ব নিশ্চিত করবে না, বরং দেশের ভবিষ্যতের জন্য আইন ও ন্যায়বিচারের মান বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ নজির তৈরি করবে। এই মন্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হয় যে, জামায়াত আমির দেশের সেনাবাহিনীর উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে দেখছেন এবং এই প্রক্রিয়াকে সমর্থন করে দেশের জনগণ ও রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সহযোগিতা ও আস্থা বৃদ্ধি করার আহ্বান জানিয়েছেন।
সকালবেলা/এমএইচ