খুলনা থেকে জেলা প্রতিনিধি রিপোর্ট করেছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল ও সাবেক সংসদ সদস্য মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, দেশের কিছু উপদেষ্টা গোপনে একটি দলের সঙ্গে যোগসাজশ করছে এবং তাদের ক্ষমতায় আনতে কাজ করছে। নির্বাচনের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, প্রশাসন ও সরকারের কিছু উপদেষ্টার মধ্যে অস্থিরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এই ধরনের কার্যকলাপ জাতির স্বার্থের বিরুদ্ধে এবং দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে হুমকির মুখে ফেলছে।
শনিবার (১১ অক্টোবর) সকালে খুলনার পাইকগাছা সরকারি কলেজ মাঠে পাইকগাছা উপজেলা জামায়াতে ইসলামের উদ্যোগে আয়োজিত ছাত্র-যুব সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ার প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, প্রশাসন ও উপদেষ্টাদের কর্মকাণ্ড এবং দলের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম নিয়ে বক্তব্য দেন।
গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে প্রথম কাজ হবে বিদ্যমান শিক্ষা ব্যবস্থায় মৌলিক পরিবর্তন আনা। যাতে দেশের প্রতিটি নাগরিক শিক্ষার সমান সুযোগ পায় এবং শিক্ষার মান বৃদ্ধি পায়। আমরা চাই এমন ব্যবস্থা, যেখানে ছাত্রছাত্রী এবং যুবকরা কোন ভেদাভেদ ছাড়াই শিক্ষার সুযোগ পাবে।” তিনি আরও বলেন, “দ্বিতীয়ত, আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করব এবং বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন নিশ্চিত করব। যে কোনো ধরনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক স্বার্থপরতা বন্ধ করতে হবে।’ তিনি আরো স্পষ্ট করে বলেন, নির্বাচন যত এগোচ্ছে, কিছু উপদেষ্টা গোপনে ক্ষমতাসীন দলের সঙ্গে যোগসাজশ করছে। এ ধরনের গোপন কার্যক্রম দেশের স্বাভাবিক প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতাকে বিপদে ফেলছে। তিনি বলেন, ‘জাতির স্বার্থে এবং দেশের স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য এই ধরনের কাজ প্রতিহত করতে হবে।’
গোলাম পরওয়ার সমাবেশে ভোটদাতাদের কাছে আবেদন করেন, ‘দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে নিজের ভোটের মর্যাদা নিশ্চিত করুন। ভোট কেবল একটি রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের প্রধান হাতিয়ার।’ তিনি আরও বলেন, ‘ভোটাধিকার ব্যবহার না করলে গণতন্ত্রকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দেওয়া হবে। আমাদের দায়িত্ব প্রতিটি নাগরিককে সচেতন করা।’
তিনি দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা সংস্কারের পাশাপাশি কুরআনের আইনকে দেশের সমাজে প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘সুবিচার প্রতিষ্ঠায় কুরআনের আইনকে সংসদে পাঠানো আবশ্যক। সামাজিক ন্যায় ও নীতি-কায়দা কোরআনের ভিত্তিতে গড়ে তোলা হবে। এটি আমাদের সমাজকে এক ন্যায়বিচার এবং শান্তিপূর্ণ সমাজে রূপান্তরিত করবে।’
মিয়া গোলাম পরওয়ারের বক্তব্যের সময় পাইকগাছা উপজেলা আমীর মাওলানা সাইদুর রহমান সভাপতিত্ব করেন। সমাবেশের পরিচালনা করেন সেক্রেটারি মো. আলতাফ হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামের কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য মাওলানা আবুল কালাম আজাদ এবং বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি জেনারেল নূরুল ইসলাম সাদ্দাম। এছাড়া পাইকগাছা উপজেলা আমীর, জেলা জামায়াতে ইসলামের নায়েবে আমীর, খুলনা মহানগরী ছাত্রশিবিরের সভাপতি এবং স্থানীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তিনি শিক্ষার্থীদের কাছে গুরুত্বারোপ করেন, দেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘যারা ক্ষমতার জন্য রাজনৈতিক সমঝোতা করছে, তাদের গোপন কার্যক্রম জাতির স্বার্থের বিপরীতে। আমাদের ছাত্র ও যুব সমাজকে সতর্ক থাকতে হবে এবং দেশের ভবিষ্যৎ রক্ষা করতে হবে।’
মিয়া গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, জামায়াতে ইসলামী ক্ষমতায় এলে দুর্নীতি, অসাম্য এবং অন্যায় প্রশাসন দূর করবে। দেশের প্রতিটি মানুষ ন্যায়বিচার পাবে এবং সমান সুযোগ ও সুবিধা নিশ্চিত হবে। তিনি সমাবেশে সকল উপস্থিত শিক্ষার্থী, যুবক ও সাধারণ জনগণকে আহ্বান জানান, তারা যাতে দেশের উন্নয়ন ও সমাজের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
সমাবেশে তিনি ছাত্র ও যুবসমাজকে সচেতন করার পাশাপাশি রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত থাকার গুরুত্ব সম্পর্কে বার্তা দেন। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ভোটাধিকারপ্রাপ্ত নাগরিককে দেশের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্য নিজের ভোট ব্যবহার করতে হবে। নৈতিকতা ও ধর্মের ভিত্তিতে দেশের প্রতি দায়িত্ব পালন করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।’ পাইকগাছা উপজেলা জামায়াতে ইসলামের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে মিয়া গোলাম পরওয়ারের বক্তব্য ছাত্র-যুব সমাজকে সচেতন ও সংগঠিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মন্তব্য করা হয়েছে। সমাবেশে রাজনৈতিক ও সামাজিক বিষয়ে সমন্বয়, সচেতনতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়।
সকালবেলা/এমএইচ