জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম গতকাল শনিবার পঞ্চগড়ে আয়োজিত লংমার্চ ও সমাবেশে বিদ্যুৎ চলে যাওয়ার ফলে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে নেসকো (নর্থ ইস্টার্ন ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি) কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কঠোর ভাষায় হুমকি দিয়েছেন। সমাপন বক্তব্য দেওয়ার সময় আচমকা বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে গেলে অতিষ্ঠ হয়ে উঠে তিনি এই ঘটনার জন্য স্থানীয় বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থাকে দায়ী করেন এবং তার কর্মীদের কড়া শাস্তির কথা বলেন।
লংমার্চ শেষকালে শেরেবাংলা পার্ক সংলগ্ন জুলাই স্মৃতিস্তম্ভে সমাবেশ থেকে বক্তব্যকালে সারজিস বলেন, ‘এর আগেও পঞ্চগড়ে আমাদের প্রোগ্রামে বারবার বিদ্যুৎ গেছে। নেসকোর যে মালিক, তাকে এবং তার পিতাকে জবাব দিতে হবে, প্রোগ্রাম চলাকালীন এমন ঘটনা কেন ঘটে? একদিন হতো, দু’দিন হতো কিছু বলতাম না, কিন্তু তিন দিন এমন হচ্ছে। যারা এটা করছে, তারা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তাদের কলিজা যদি বড় হয়, আমরা সেই কলিজা ছিঁড়ে রাস্তায় ফেলবো।’ তার বক্তব্যের একাংশে কড়া ভাষায় স্থানীয় কর্মকর্তাদের জন্য ‘জবাবদিহি’ ও ‘শাস্তি’ দাবি করেন।
সারজিস আলম আরো বলেন, ‘এই পঞ্চগড়ে যদি কোনো প্রতিষ্ঠান পক্ষপাতমূলক আচরণ করে, ওই প্রতিষ্ঠান আর এখানে থাকবে না, এটাই আমার প্রতিশ্রুতি। যারা চাঁদাবাজ, দখলদার, সিন্ডিকেট, মাদক ব্যবসায়ী বা দুর্নীতিবাজ, তাদের আমরা ছাড় দেব না। তাদের আর কোনো শান্তির রাত নেই; আমরা তাদের খোঁজে বের করে আইনের মুখোমুখি করবো।’
তিনি আরও সতর্ক করলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার, লোকলজ্জাহীনতার বিরুদ্ধে জোরালো কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হবে।
এদিকে লংমার্চটি পঞ্চগড় জেলা শহরের চিনিকল মাঠ থেকে শুরু করে বাংলাবান্ধা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। আয়োজকরা জানান, অভিযানটি চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ও অন্যায়-অবিচারের প্রতিবাদে আয়োজন করা হয়েছিল। নামমাত্র বক্তৃতা ও মিছিল শেষে দুপুর সোয়া বারোটার দিকে কয়েকশ-শত মোটরসাইকেল ও কয়েকটি পিকআপসহ একটি শোভাযাত্রা বাংলাবান্ধা রুট ধরে অনুষ্ঠিত হয়। অংশগ্রহণকারীরা বিভিন্ন ব্যানার ও প্ল্যাকার্ডে স্থানীয় সমস্যা, জমি দখল, সিন্ডিকেট বিরোধী নীতি ও ন্যায্য বিচার দাবি তোলেন।
স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, মিছিল ও সমাবেশ শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। স্থানীয় থানা ও জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখেছেন এবং বড় ধরনের সংঘাত এড়াতে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন ছিল। তবে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্নতার ঘটনায় সাময়িক উত্তেজনা দেখা দেয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে বক্তারা তীব্র সমালোচনা করেন।
নেসকো পঞ্চগড় সার্কেলের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ওই সময় আড়াই মিনিটের প্রযুক্তিগত ত্রুটির কারণে এলাকার বিদ্যুৎ কেটে গিয়েছিল; ঘটনাস্থলে দ্রুত জরুরি টেকনিশিয়ানের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংযোগ পুনঃস্থাপন করা হয়। তারা বলেন, ‘প্রোগ্রাম চলাকালীন বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হওয়া দুঃখজনক, এটি পরিকল্পিত নয়। আমরা স্থানীয় রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ইচ্ছাকৃতভাবে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করি না এবং ভবিষ্যতে যাতে এমনটি না ঘটে সে জন্য পর্যবেক্ষণ বাড়ানো হবে।’
স্থানীয় নাগরিক সমাজের এক নেতা মজিবুর রহমান বলেন, জনসমাবেশে বিদ্যুৎ চলে গেলে বক্তৃতার ফ্লো বিঘ্নিত হয় এবং উত্তেজনা বেড়ে ওঠে; তাই এগুলোর আগে প্রশাসন ও বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের মধ্যে সমন্বয় থাকা দরকার।
তিনি যোগ করেন, ‘প্রশাসন, রাজনৈতিক দল ও সেবাদাতা সংস্থার মধ্যে সমন্বয় থাকলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব।’
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করান, নির্বাচনি আবহে জনসমাবেশ ও রাজনৈতিক আয়োজনের সময় বিদ্যুৎ বা অন্যান্য সার্ভিসের বিঘ্ন ঘটলে তা সহজেই রাজনৈতিক আকার ধারণ করতে পারে; ফলে জনশান্তি রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। নেসকো কর্তৃপক্ষ ইতোমধ্যে ঘটনা তদন্ত করে দোষী শনাক্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
অন্যদিকে সারজিস আলম বলেছেন, যদি ভবিষ্যতে আবার এ রকম ঘটনার পুনরাবৃত্তি হয়, তাহলে তারা কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করতে পিছপা হবেন না এবং আচরণগত অস্বচ্ছতা বরদাস্ত করা হবে না-এমনটাই তার সতর্কতা।
সকালবেলা/এমএইচ