প্রিন্ট এর তারিখঃ Oct 12, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ Oct 12, 2025 ইং
সোনার ছেলে টাকার খনিতে!

মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম
বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে ছাত্রলীগ নেতা কর্মীদের দলটির সোনার ছেলে বলে অভিহিত করতেন দলীয় নেতাদের অনেকেই। আর সেই সোনার ছেলেদেরই একজন সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার গোলাম মোস্তফাকে চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের অতি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য গুদাম (টাকার খনি খ্যাত) হিসেবে পরিচিত পানছড়ি এলএসডিতে (লোকাল স্টোরেজ ডিপো) সম্প্রতি পদায়ন করা হয়েছে। তার পদায়নকে ঘিরে চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগে বইছে সমালোচনার ঝড়।
আওয়ামী লীগের সাবেক এক মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ এই মোস্তফাকে পদায়নে প্রায় অর্ধ কোটি টাকা লেনদেন করা হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে। এ ব্যাপারে ইতোমধ্যেই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের কাছে বাংলাদেশ খাদ্য পরিদর্শক সমিতির সাধারণ সদস্যবৃন্দ নামে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।
খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর ফেনীর ছাগলনাইয়া খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় থেকে তাকে পানছড়ি এলএসডি গুদামে পদায়ন করা হয়। একই আদেশে পানছড়ি গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন-অর-রশিদকে হালিশহর সিএসডিতে বদলি করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, প্রায় অর্ধ কোটি টাকার বিনিময়ে গোলাম মোস্তফাকে পানছড়িতে বদলি করার হয়েছে। আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে পরিচিতি সাবেক এই ছাত্রলীগ ক্যাডারকে গুরুত্বপূর্ণ গুদামে পদায়নের ঘটনায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে রাঙামাটি সদর এলএসডিতে কর্মরত ছিলেন আলোচিত-সমালোচিত গোলাম মোস্তফা। ওই সময় নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। সরকারি বিভিন্ন বাহিনী, পাহাড়ি এলাকায় সরকারি বিভিন্ন প্রোগ্রামের চাল নিয়ে গোঁজামিল করে কোটিপতি বনেছেন তিনি। ভারত, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা ভালোমানের চাল কারসাজি করে চোরা কারবারিদের হাতে তুলে দিতেন। ভিয়েতনাম চালের বদলে রানীরহাট থেকে আতপ চাল কিনে গুদামে রাখতেন। নিম্নমানের চাল পাহাড়ি ও স্থানীয়দের মধ্যে বিতরণ করতেন গোলাম মোস্তাফা। শুধু তাই নয়, নিম্নমানের চাল বিতরণ, সরকারি চালের বস্তা থেকে চাল কেটে (বস্তা থেকে চুরি করা) সরিয়ে রাখা, চাল পরিবর্তন করে আতপ চাল বিতরণের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আয় করেছেন পাহাড়ি এলাকায়।
একাধিক কর্মকর্তা বলেন, দেশের বড় খাদ্য গুদাম চট্টগ্রামের দুই সিএসডি হালিশহর ও দেওয়ান হাট এবং চট্টগ্রাম সাইলো থেকে রাঙামাটিতে চাল ও গম নেওয়া হয়। এসব চাল-গম ডিও ব্যবসায়ী ও কালো কারবারীদের কাছে বিক্রি করে দিতেন গোলাম মোস্তফা। চাল-গম কালো বাজারে পাচার করা হলেও ভি-ইনভয়েস গ্রহণ করা হতো রাঙামাটিতে। শুধু কাগজে-কলমে চাল-গম রিসিভ দেখানো হত। ডিও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আঁতাত করে ব্যবসা করে হাতিয়ে নিয়েছেন লাখ লাখ টাকা।
সরকারি চাল কালোবাজারে বিক্রি, ডিওর চাল খাদ্য গুদামে পড়ে থাকা, মিলারদের কাছ থেকে খাবার অযোগ্য চাল নিয়ে গ্রহণ, বিল প্রদানে ঘুষ গ্রহণসহ নানা অভিযোগ। গুদাম কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠার পর চলতি বছরের ২২ এপ্রিল তাকে প্রত্যাহার করা হয়।
কে এই গোলাম মোস্তফা :
তার বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্জারামপুর এলাকায়। পড়ালেখা করেছেন কুমিল্লার অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ কলেজে। ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগ আমলের সাবেক এমপি ক্যাপ্টেন এবি তাজুল ইসালামে সুপারিশে তার চাকরি হয়। একই পরিবারে চার জন খাদ্য বিভাগে চাকরি করেন। তার স্ত্রী সালমা আফরোজ, শ্যালিকা তসলিমা আক্তারও খাদ্য বিভাগে চাকরি করেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের তৎকালীন এমপি এবি তাজুল ইসলামের সুপারিশে গোলাম মোস্তফা বাঞ্জারামপুর উপজেলার ৯৪ নম্বর ইছাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ছিলেন। গোলাম মোস্তফা ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ আমলে সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম ও আবদুল মজিদকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন পোস্ট দিয়েছেন। পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও নিয়ে পোস্ট দিয়েছেন। তার প্রমাণ রয়েছে আমাদের হাতে।এই ব্যাপারে গোলাম মোস্তাফার সাথে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করেন।
সকালবেলা/এমএইচ
াাা