
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, হারানো অস্ত্র শতভাগ উদ্ধার করা কখনও সম্ভব নয়। তবে লুট হওয়া বা অবৈধভাবে ছড়িয়ে পড়া অস্ত্র উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘কিছু অস্ত্র বিদেশে পাচার হয়ে যায়, কিছু ভেতরে লুকিয়ে থাকে। শতভাগ উদ্ধার করা বাস্তবে সম্ভব নয়।’
রোববার (১২ অক্টোবর) দুপুরে সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোর কমিটির বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, আজকের বৈঠকের মূল লক্ষ্য ছিল আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে আয়োজনের প্রস্তুতি। তিনি জানান, নির্বাচনের সময় কেউ যেন পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে না পারে, সে বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনের স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে মাঠপর্যায়ের সব প্রশাসনিক ও আইনশৃঙ্খলা সংস্থাকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধ বা সহিংসতার সময় হারানো অস্ত্র সব উদ্ধার হয় না, কিন্তু আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাচ্ছি। এর ফলে নির্বাচনের পরিবেশে কোনো প্রভাব পড়বে না।’ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের আটক বা অবস্থান সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, আদালতের নির্দেশ ও আইন অনুযায়ী যা করণীয়, তাই করা হবে।
সভায় নির্বাচনি নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক প্রস্তুতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, যে কোনও বিশৃঙ্খলাকারী ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নির্বাচনের সময় ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বডি ওর্ন ক্যামেরা ব্যবহার এবং কার্যকর মনিটরিং ব্যবস্থার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া পূর্ববর্তী নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কিছু কর্মকর্তাকে এবার দায়িত্ব থেকে বিরত রাখা হতে পারে, যাতে নিরপেক্ষতা নিশ্চিত হয়। নির্বাচনের সময় টহল ও গোয়েন্দা নজরদারি জোরদার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যাতে কোনো প্রকার অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি না হয়।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানান, নির্বাচনি নিরাপত্তা জোরদারে প্রায় দেড় লাখ পুলিশ সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। সারাদেশে ২৮টি ব্যাচে তিন দিন মেয়াদি এই প্রশিক্ষণ চলবে ১৩০টি ভেন্যুতে। এর মধ্যে এক ব্যাচের প্রশিক্ষণ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে, আরেকটি ব্যাচের প্রশিক্ষণ চলছে। আগামী বছরের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে সব ব্যাচের প্রশিক্ষণ শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের জন্য ‘প্রাক-নির্বাচনি প্রশিক্ষণ’ শিরোনামে প্রায় ৫ লাখ ৮৫ হাজার সদস্যকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে ১ লাখ ৩৫ হাজার জনকে অস্ত্রসহ এবং ৪ লাখ ৫০ হাজার জনকে নিরস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এছাড়া আনসার ব্যাটালিয়নের ৩ হাজারেরও বেশি সদস্যকে ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ হিসেবে নিয়োজিত করার প্রস্তুতি চলছে।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর ১,১০০ প্লাটুনে ৩৩ হাজার সদস্যও নির্বাচনী দায়িত্বে থাকবে বলে জানান উপদেষ্টা। এ প্রশিক্ষণের প্রায় ৬০ শতাংশ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে, যা আগামী ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে। পাশাপাশি, প্রায় ৮০ হাজার সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য নির্বাচনের সময় মাঠে থাকবে নিরাপত্তা জোরদারের জন্য। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনে সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে যেন কোনো অশান্তি বা সংঘাত না হয়, সে বিষয়ে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রামের পরিস্থিতি স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের কিছু লোক অতীতে ঝটিকা মিছিল করলেও এখন তা অনেক কমে এসেছে। তারা সম্প্রতি শারদীয় দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে কিছু ষড়যন্ত্রের চেষ্টা করেছিল, তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় সব চক্রান্ত ব্যর্থ হয়েছে।’
তিনি আরও জানান, মাদকবিরোধী অভিযানে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ অব্যাহত থাকবে। শুধু বাহক নয়, মাদকের মূল হোতা ও গডফাদারদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।
নিজেকে নিয়ে ‘সেইফ এক্সিট’ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি হেসে বলেন, ‘আমি কোথায় যাব? একা একা সেইফ এক্সিট নিয়ে বাইরে গিয়ে কী করব? আমার স্ত্রী-সন্তান সবাই বাংলাদেশে। আমি এই দেশেই কাজ করতে চাই।’
তিনি শেষে বলেন, ‘আমরা চাই জনগণ একটি শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপভোগ করুক। এজন্য সরকার, প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একযোগে কাজ করছে। নির্বাচনের সময় যেন কেউ বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি রয়েছে।
সকালবেলা/এমএইচ