
সরকারের ঘোষিত বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধিকে ‘অপর্যাপ্ত ও অবাস্তব’ বলে প্রত্যাখ্যান করেছেন দেশের সব বেসরকারি এমপিওভুক্ত স্কুলের শিক্ষক–কর্মচারীরা।
এ প্রতিবাদ জানাতে আজ ঢাকায় সারা দেশের শিক্ষকদের বড় জমায়েত আহ্বান করা হয়েছে। জমায়েতটি জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনুষ্ঠিত হবে এবং এটি থেকে টানা কর্মবিরতির ঘোষণা আসার সম্ভাবনা রয়েছে।
শিক্ষক নেতারা বলছেন, সরকারের প্রজ্ঞাপনে মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া এবং চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির দাবি মানা না হলে তারা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচিতে যাবেন। তারা মনে করেন, ৫০০ টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে অত্যন্ত নগণ্য এবং শিক্ষকদের মৌলিক চাহিদা মেটাতে অপ্রতুল।
শিক্ষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন এমপিওভুক্ত শিক্ষা জাতীয়করণ প্রত্যাশী জোটের সদস্য সচিব অধ্যক্ষ দেলাওয়ার হোসেন আজিজী।
তিনি বলেন, ‘সরকার যে ৫০০ টাকা বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন দিয়েছে, তা শিক্ষকদের সঙ্গে পরিহাস ছাড়া কিছু নয়। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে এই টাকায় একদিনের পরিবারের বাজারও কভার করা সম্ভব নয়। আমরা সরকারের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করছি এবং মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা বৃদ্ধির দাবি পুনর্ব্যক্ত করছি।’
আজিজী আরও জানান, ইতোমধ্যে সারা দেশের শিক্ষকরা ঢাকায় আসছেন। আগামীকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে জমায়েত কর্মসূচি থেকে টানা কর্মবিরতির ঘোষণা আসতে পারে।
তিনি বলেন, ‘যদি এই সময়ের মধ্যে প্রজ্ঞাপন জারি না হয়, আমরা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করব। আমাদের দাবি, মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া এবং চিকিৎসা ভাতা ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৫০০ টাকা করা হোক।’ এর আগে, গত ১৩ আগস্ট জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষকেরা ২০ শতাংশ হারে বাড়িভাড়া ভাতা বৃদ্ধির প্রজ্ঞাপন ও সর্বজনীন বদলি চালুর দাবি জানিয়েছিলেন। সেই কর্মসূচির মধ্যে ছিল ১৪ সেপ্টেম্বর সারা দেশে অর্ধদিবস কর্মবিরতি, ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর পূর্ণদিবস কর্মবিরতি এবং বিভাগীয় শহরে সম্মেলন। এছাড়া ১২ অক্টোবর থেকে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অনির্দিষ্টকালের অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছিল।
শিক্ষক নেতারা মনে করছেন, এই আন্দোলন শুধু তাদের অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য নয়, বরং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। তারা বলেন, ‘যতক্ষণ পর্যন্ত শিক্ষকদের মৌলিক দাবি মেনে নেওয়া হবে না, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা আমাদের অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাব। এটি আমাদের দায়িত্বশীলতা এবং দেশের শিক্ষার মান বৃদ্ধির চেষ্টার অংশ।’ জমায়েত কর্মসূচিতে শিক্ষকদের সঙ্গে উপস্থিত থাকবেন বিভিন্ন জেলা ও মহানগরের শিক্ষক নেতারা। তারা আশা প্রকাশ করেছেন যে, সরকারের কাছে শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি পৌঁছাবে এবং তা কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হবে। শিক্ষকরা শিক্ষার মান উন্নয়নের পাশাপাশি তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের জন্যও এই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
এমন অবস্থায়, শিক্ষকদের এই আন্দোলনকে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক স্তরে সমর্থন পাচ্ছে। দেশের অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরাও শিক্ষকদের দাবিকে সমর্থন জানাচ্ছেন। শিক্ষক নেতারা মনে করেন, এটি শুধুমাত্র তাদের স্বার্থ সংরক্ষণের আন্দোলন নয়, বরং সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করার একটি উদ্যোগ। শিক্ষক নেতাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, ‘আমরা আজকের এই জমায়েত ও সম্ভাব্য টানা কর্মবিরতির মাধ্যমে সরকারকে শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবির গুরুত্ব বুঝাতে চাই। আমাদের আন্দোলন শান্তিপূর্ণ, শিক্ষার মান উন্নয়নের জন্য নিবেদিত এবং দেশের ভবিষ্যতের জন্য অপরিহার্য।’
তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, সরকারের এখনই উদ্যোগ নিলে কর্মবিরতির প্রয়োজন হবে না। তবে যদি দাবি মেনে নেওয়া না হয়, তাহলে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালীন অবস্থান এবং টানা কর্মবিরতি ঘোষণার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
শিক্ষকরা সুনিশ্চিত করেছেন, এই আন্দোলন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার কল্যাণ এবং শিক্ষকদের অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে হবে। শিক্ষক নেতারা শিক্ষার্থীদের ওপর নেতিবাচক প্রভাব কমানোর জন্য কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পরিচালনার পরিকল্পনা নিয়েছেন।
তারা বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য সরকারকে আমাদের যৌক্তিক দাবি মানতে বাধ্য করা, যাতে দেশের শিক্ষকরা আর্থিক নিরাপত্তা ও শিক্ষার মান উন্নয়নে মনোনিবেশ করতে পারেন।’
সকালবেলা/এমএইচ