প্রিন্ট এর তারিখঃ Oct 12, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ Oct 11, 2025 ইং
সৎকারে পাওনাদারের বাধা, পুলিশের হস্তক্ষেপে দাহ সম্পন্ন

পাবনার চাটমোহর উপজেলায় এক বেদনাদায়ক ও মানবিকতার সীমা লঙ্ঘনকারী ঘটনা ঘটেছে। পাওনা টাকা না পেয়ে মৃত ব্যক্তির লাশ বহনকারী খাটিয়া আটকে রাখেন কয়েকজন পাওনাদার। দীর্ঘ এক ঘণ্টা পর পুলিশের হস্তক্ষেপে অবশেষে সম্পন্ন হয় সৎকার কার্যক্রম।
এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, চাটমোহরের বিলচলন ইউনিয়নের বোথর গ্রামের মৃত নিত্তি ব্যবসায়ী বসন্ত দাসের ছেলে কার্তিক চন্দ্র দাস দুলাল (৬৯) বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। গত শুক্রবার সকালে তার দাহক্রিয়ার প্রস্তুতি চলছিল। পরিবারের সদস্যরা ও প্রতিবেশীরা শেষ বিদায়ের আয়োজন করছিলেন, এমন সময় ভাঙ্গুড়া উপজেলার অষ্টমনিষা গ্রামের পান্না সরকার, দায়েন সরকার ও শফি নামের তিনজন পাওনাদার কয়েকজন সহযোগীসহ সেখানে উপস্থিত হন।
তারা দাবি করেন, কার্তিক দাসের ভাতিজা রিপন কুমার দাস তাদের কাছ থেকে ব্যবসার উদ্দেশ্যে ধার নেওয়া টাকা পরিশোধ করেননি। সেই টাকা না দিলে মরদেহ দাহ করতে দেওয়া হবে না। এ নিয়ে শ্মশানে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজন ও স্থানীয়রা পাওনাদারদের বুঝিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করলেও তারা অনড় অবস্থানে থাকেন। অবশেষে খবর পেয়ে চাটমোহর থানার ওসি মো. মঞ্জুরুল আলম ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেন। তিনি পাওনাদারদের বিষয়টি তদন্ত করে দেখার আশ্বাস দিলে তারা সৎকারে বাধা প্রত্যাহার করেন। এরপর দুপুরের দিকে মরদেহটি চাটমোহর মহাশ্মশানে দাহ করা হয়।
ঘটনার বিষয়ে মৃত কার্তিক দাসের আত্মীয় রিপনের কর্মচারী কনক জানান, ‘রিপন ও পান্না গংদের মধ্যে ব্যবসায়িক লেনদেন ছিল। রিপন চালের ব্যবসা করতেন এবং সেই সময় ব্যাংকের সাদা চেক দিয়েছিলেন। প্রকৃতপক্ষে প্রায় ৬ লাখ টাকা পাওনা রয়েছে, কিন্তু তারা ২০ লাখ টাকা দাবি করছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘রিপন একসময় কার্তিক দাদুর কাছ থেকেও প্রায় ৩৯ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসা বন্ধ করে উধাও হয়ে যান। ফলে এই ঘটনায় মৃত ব্যক্তির পরিবার ভীষণভাবে মানসিক চাপে রয়েছে।’
উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি অশোক চক্রবর্তী বলেন, ‘রিপনের সঙ্গে পান্নাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিল সত্যি, কিন্তু প্রয়াত কার্তিক দাসের সঙ্গে তাদের কোনও আর্থিক লেনদেন ছিল না। মৃত্যুর পর এমন ঘটনার মাধ্যমে একটি পরিবারকে অপমান করা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অমানবিক।’
স্থানীয়রা বলেন, মৃত্যুর মতো চরম বাস্তবতাতেও আর্থিক দাবি-দাওয়ার এমন আচরণ সমাজের নৈতিক অবক্ষয়কে ফুটিয়ে তুলছে। তারা এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ দাবি করেছেন।
চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মঞ্জুরুল আলম বলেন, ‘ঘটনাটি অত্যন্ত দুঃখজনক। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়ে মরদেহের সৎকার নিশ্চিত করেছি। পাশাপাশি পাওনাদার-পাওনাদির জটিলতা আইনগতভাবে সমাধানের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।’ এ ঘটনায় এলাকায় মানবিকতার সংকট ও আইনি সচেতনতার অভাব নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
স্থানীয়দের মতে, একজন মৃত ব্যক্তির প্রতি সম্মান দেখানো প্রতিটি ধর্ম ও সংস্কৃতির মৌলিক নীতি। অথচ কিছু মানুষের আর্থিক স্বার্থ এই নীতিকে পদদলিত করেছে। এই অনভিপ্রেত ঘটনা সমাজে নৈতিক মূল্যবোধ পুনর্গঠনের প্রয়োজনীয়তাও স্পষ্ট করে তুলেছে।
সকালবেলা/এমএইচ
াাা